বাহুবলের আকাশে এইচএসসি-২০২৫-এর ফলাফল যেন এক ঝড়ের মতো আছড়ে পড়লো, যা শিক্ষার্থীদের স্বপ্নের আলয়কে ছিন্নভিন্ন করে দিয়েছে। হবিগঞ্জের এই উপজেলায় গড় পাসের হার থমকে দাঁড়িয়েছে মাত্র ২৬.৬৪ শতাংশে—এক অন্ধকার ছায়া যা জেলার ৪৯.৮৮ শতাংশের হারকেও ছাপিয়ে যায় কমতির গভীরতায়। এ যেন একটি দুঃস্বপ্নের শুরু, যেখানে হাজারো যুবক-যুবতীর চোখে জমে উঠেছে হতাশার অশ্রু, আর অভিভাবকদের বুকে বাজছে অনুশোচনার ঢাক। কিন্তু এই বিপর্যয়ের মাঝেও জ্বলে উঠছে একটি আলোর রেখা—পরিবর্তনের আহ্বান, যা সমাজকে জাগ্রত করবে এই অন্ধকার থেকে মুক্তির পথে।
প্রকাশিত ফলাফলে উপজেলার দুটি কেন্দ্র থেকে মোট ১০৮১ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন, কিন্তু পাসের স্বাদ পেয়েছেন মাত্র ২৮৮ জন। বাহুবল-০১ কেন্দ্রে আলিফ সোবহান চৌধুরী সরকারি কলেজের ৬৮৩ জনের মধ্যে মাত্র ১৪৬ জন পার হয়ে উঠেছেন, পাসের হার ২১.৩৮ শতাংশ—এ যেন একটি ভাঙা সেতুর উপর দাঁড়িয়ে থাকা স্বপ্নের টুকরো। একই কেন্দ্রের মিরপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় অ্যান্ড কলেজে ৬৬ জনের মধ্যে ২৬ জন পাস করলেও, ৩৯.৩৯ শতাংশের হারটি যেন একটি অসম্পূর্ণ আশার ইঙ্গিত দেয়। অন্যদিকে, বাহুবল-০২ কেন্দ্রের বাহুবল কলেজে ৩৩২ জনের মধ্যে ১১৬ জনের সাফল্য ৩৪.৯৪ শতাংশ পাসের হার নিয়ে এসেছে, যা অন্যদের তুলনায় সামান্য উজ্জ্বলতা ছড়ায়, কিন্তু তবু অপূর্ণ। এই সংখ্যাগুলো কেবল অঙ্ক নয়, এগুলো হাজারো পরিবারের আশা-ভাঙার গল্প, যা বুক ফাটিয়ে দেয়।
ফলাফলের এই বিপর্যয়ের পিছনে যেন এক অদৃশ্য ঝড়ের ছায়া—শিক্ষার্থীদের অনিয়মিত উপস্থিতি, যা স্কুলের দরজায় ধুলো জমিয়ে রাখে বেশিরভাগ দিন। শিক্ষকদের পাঠদানে তদারকির অভাব যেন একটি নির্মম খেলা, যেখানে জ্ঞানের বীজ বপন না হয়ে শুকিয়ে যায়। আর অভিভাবকদের গাফিলতি? এ যেন একটি তীক্ষ্ণ ছুরির ফলা, যা সন্তানের ভবিষ্যতকে ক্ষতবিক্ষত করে। অনেকে বলছেন, এই ত্রুটিগুলো একত্রিত হয়ে তৈরি করেছে এই অন্ধকার, কিন্তু এর মধ্যে লুকিয়ে আছে একটি শক্তিশালী আহ্বান—ঐক্যবদ্ধ হয়ে উঠুন, পরিবর্তন আনুন। শিক্ষক-শিক্ষার্থী-অভিভাবকের হাত মিলিয়ে এই বিপর্যয়কে পরাজিত করুন, যেন বাহুবলের আকাশ আবার উজ্জ্বল হয়ে উঠে।
এইচএসসি-২০২৫-এর জাতীয় পাসের হার ৫৮.৮৩ শতাংশে নেমে এসেছে, যা গত বছরের তুলনায় ১৮.৯৫ শতাংশ কম—একটি সতর্কবাণী যা সারা দেশকে নাড়িয়ে দিয়েছে। বাহুবলের এই হতাশাজনক চিত্র যেন একটি আয়না, যা সমাজকে তার দুর্বলতা দেখিয়ে দিচ্ছে। কিন্তু হতাশা থেকে উঠে দাঁড়ানোর শক্তি আছে আমাদের মধ্যে; এটি একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা হোক, যেখানে প্রতিটি শিক্ষার্থীর চোখে জ্বলবে সাফল্যের আলো, আর বাহুবল হয়ে উঠবে শিক্ষার উজ্জ্বল দ্বীপ। আসুন, এই বিপর্যয়কে জয় করে একটি গৌরবময় ভবিষ্যত গড়ি—কারণ, স্বপ্ন ভাঙে না, এটি শুধু পুনর্জন্মের অপেক্ষায় থাকে।

